এ রহমান: স্থানীয় শিল্প কারখানার কার্টন চাহিদা মেটানোর নিমিত্তে স্বাধীনতার পর হতে বাংলাদেশে লোকাল প্যাকেজিং শিল্পের বিকাশ ঘটে। লোকাল প্যাকেজিং শিল্পের মালিকগণ একান্ত নিজেস্ব অর্থায়নে তিল তিল করে গড়ে তোলে এই শিল্প। সরকারকে ভ্যাট, ট্যাক্স প্রদান সহ সকল নিয়মনীতি মেনে এই শিল্প বিকশিত হয়েছে। বর্তমানে এই শিল্প হতে সরকারের বিপুল পরিমান ভ্যাট ও রাজস্ব আদায় হচ্ছে, অথচ একপেশে ভ্যাট, ট্যাক্স নীতি ও কাগজকল মালিাকদের স্বেচ্ছাচারী ভাবে প্রতি বছর কাগজের মূল্য বৃদ্ধির ফলে ইতিমধ্যে কিছু প্যাকেজিং শিল্প বন্ধ হয়েগেছে। আমাদের লোকাল প্যাকেজিং শিল্প স্থানীয় ভাবে উৎপাদিত গার্মেন্টস, ঔষধ, পানীয়, ভোজ্য তেল, টোবাকো, কেমিক্যাল, ক্যান/বোতল, ইলেকট্রিক্যাল প্রোডাক্টস, কনফেকশনারী, সিরামিক্স, টেক্সটাইল, কসমেটিক, বিস্কুট, ফুটওয়্যার, টয়, দুগ্ধজাত পন্য সহ যাবতীয় পন্যের মোড়ক উৎপাদনকারী শিল্প। দীর্ঘ দিন থেকে এই শিল্প অসম বানিজ্য তথা ভ্যাট ট্যাক্স নীতির স্বীকার। সর্বশেষ ২০১৯-২০ ইং অর্থ বছরে ঘোষিত বাজেটে এই শিল্প বন্ধ হওয়ার দ্বার প্রান্তে চলে গেছে। নিম্নে আপনাদের সদয় অবগতি ও কার্যক্রমের নিমিত্বে লোকাল প্যাকেজিং শিল্পের সমস্যা ও প্রতিকার প্রদত্ত হলো ঃ- স্থানীয় পর্যায়ে সরবরাহের জন্য কার্টন উৎপাদনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠান একটি ক্রমবর্ধমান ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাত। এই শিল্পখাতে প্রায় ২০০০টি শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং এগুলোতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় দশ লাক্ষ লোকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। প্যাকেজিং শিল্পের কাঁচামালের চাহিদা মেটাতে বর্তমানে শতাধিক পেপার মিল রয়েছে। তার মধ্যে প্রায় ৭০ টি পেপার মিল দেশের প্রায় ২০০০ টি লোকাল প্যাকেজিং শিল্পে কাগজ সরবরাহ করে আসছে। পেপার মিলগুলোর প্রধান উপকরণ হলো প্যাকেজিং শিল্প প্রতিষ্ঠানের ওয়েস্টেজ কাগজ, যা প্যাকেজিং শিল্প থেকেই কেজি প্রতি ১৫ থেকে ১৬ টাকা দরে কাগজ কলগুলো ক্রয় করে থাকে। ১ কেজি কাগজ উৎপাদন করতে ১ কেজি ২০০ গ্রাম ওয়েস্টেজ কাগজ লাগে। অথচ প্যাকেজিং শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাগজ কলগুলোর উৎপাদিত মিডিয়া কাগজ প্রতি কেজি ৩৮ থেকে ৪২ টাকা দরে এবং লাইনার কাগজ প্রতি কেজি ৫৫ থেকে ৫২ টাকা দরে ক্রয় করতে হচ্ছে। কাগজ কল গুলো কখনই বিক্রয় মূল্যের উপর ভ্যাট দেয় নাই। ট্যারিফ সুবিধা নিয়ে মিডিয়া কাগজের প্রকৃত মূল্য ৩৮টাকা থেকে ৪২ টাকা হলেও কাগজ কলগুলো মাত্র ২০ টাকার উপর ১৫% ভ্যাট এবং ৫২ টাকার লাইনার কাগজের জন্য ২৬ টাকার উপর ১৫% ভ্যাট প্রদান করে আসছিল। এমনি প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে লোকাল প্যাকেজিং শিল্পে সর্বশেষ সুনামী আঘাত হানে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ঘোষিত অসম ভ্যাট ট্যাক্স ও বানিজ্য নীতি। কাগজকল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান হওয়ার পরও তাদের ভ্যাট পরিশোধের পরিমান ১৫% থেকে কমিয়ে ৫% করা হয়েছে। যাহার ফলে ট্যারিফ সুবিধা ভোগী কাগজ প্রস্তুতকারীদের ভ্যাট টন প্রতি যথাক্রমে মিডিয়া পেপার ১৫২০ টাকা, ব্রাউন লাইনার ১৪৯০ টাকা, সাদা লাইনার ১৫৩০ টাকা হারে রাজস্ব কমে গিয়ে লোকাল প্যাকেজিং শিল্পের উপর রাজস্ব হিসাবে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।যাহার পরিমান ৫৬.৫০% অর্থাৎ প্যাকেজিং শিল্পের ট্রেজারী জমা ৫৬.৫০% বৃদ্ধি পেয়েছে।যাহা প্যাকেজিং পন্যের মূল মূলের থেকে সমন্বয় হয়ে মার্জিনের পরিমান মাইনাস এর ঘরে পৌছে গেছে। এভাবে আইন পরিবর্তন করে বর্তমান আইনে আমাদেরকে মোট বিলের উপর ৫% অগ্রীম কর বসানোর ফলে লোকাল প্যাকেজিং শিল্পের ৩% থেকে ৪% নীট প্রপিট মাইনাসের সূচকে পৌছে কমবেশী ৫-৭% লোকশানে পৌছেগিয়ে ব্যাংকের দ্বায় দেনা গানিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমান সকল প্যাকেজিং মালিকগন ঋনের দায়ে জর্জরিত। পক্ষন্তরে কাগজ প্রস্তুত কারী প্রতিষ্ঠানের রাজস্ব ৫৬.৫০% কমে গিয়েছে। উল্লেখ করা যাইতে পারে গত ৩০ মার্চ ২০১৮ ইং তারিখে হঠাৎ করে কাগজের টন প্রতি ১০০০০ (দশ হাজার) টাকা বৃদ্ধি করা হয়, যাহার ফলে লোকাল শিল্প মালিকগন লক্ষ লক্ষ টাকা লোকশান করে। সে ধকল কাটায়ে উঠতে না উঠতেই সরকার কর্তৃক ৫৬.৫% রাজস্ব বৃদ্ধি করে লোকাল প্যাকেজিং শিল্পের উপর একপেশে রাজস্ব নীতি হিসেবে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমদানী নীতিতে লোকাল প্যাকেজিং শিল্পের জন্য ১৫% ভ্যাট ও ১০% কাস্টম ডিউটি ৫% অওঞ আরোপ করে লোকাল প্যাকেজিং এর জন্য বাহির থেকে কাগজ আমদানী কঠোর করে রাখা হয়েছে। এই আমদানী নীতিকে পুঁজি করে কাগজ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো একচেটিয়া অনৈতিক বানিজ্য করে যাচ্ছে। এই ভাবে পুঁজিবাদীদেরকে সুযোগ দেওয়ার ফলে চলতি অর্থবছরে প্রথম ৫ মাসে সরকারের রাজস্ব আদায় কমপক্ষে ২৭হাজার কোটি টাকা কমে গেছে। আমরা সকলে জানি, একটি গণতান্ত্রিক দেশে আইন সবার জন্য সমান অথচ বিগত বাজেটে অসম রাজস্ব নীতি ও বৈষম্য মূলক আইনের মাধ্যমে ছোটদেরকে আরও ছোট এবং বড়দেরকে আরও বড় করার সুযোগ করে দিয়েছে। পক্ষান্তরে পেপার মিল গুলির স্বেচ্ছাচারী ভাবে কাগজের মূল বৃদ্ধি প্যাকেজিং মালিকদের কে বিপুল লোকশানের সম্মুখিন করেছে। এমতাবস্থায় আমরা আপনাদের মাধ্যমে সরকারের সকল প্রতি নিম্নের দাবি গুলি পেশ করছি। ১। যেহেতু আমরা ১৫% বা আদর্শ হারে ভ্যাট প্রদান করি, তাই আমাদের উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামাল এর উপর ভ্যাট ১৫% হওয়াই বাঞ্চনীয়। কাচামাল ক্রয়ে যেহেতু আমরা নিট মূল্যের উপর ভ্যাট প্রদান করি, তাই প্যাকেজিং পেপারের ভ্যাট ৫-৭.৫% এর পরিবর্তে ১৫% করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি যানাচ্ছি। ২ বাংলাদেশ উৎপাদিত প্যাকেজিং পেপার মূল্য আন্তর্জাতিক পেপার মূল্য হতে আনেক বেশি যা আপনারা অনায়াসে যাচাই করতে পারেন। আদর্শ হার ব্যাতীত ভ্যাট এর ক্ষেত্রে ভিডিএস কর্তন এর বিধান রাখা হয়েছে বর্তমান আইনে।ভ্যাট প্রদানকারী এবং আদায়কারী উভয় যাদি ঠউঝ কর্তকারী সত্তা হয় তবে এ আইন উভয় কর্তনকারীর ক্ষেত্রে রহিত করার দাবি জানাচ্ছি। সংবাদ সম্মেলন পাঠ করেন বাংলাদেশ লোকাল কার্টন ম্যানুফেক্চারার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি এম. এ. বাশার পাটোয়ারী। উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক মীর রায়হান আলী, সহ-সভাপতি শাহাজাহান কামাল সাজু।