1. [email protected] : editor :
  2. [email protected] : facfltd :
  3. [email protected] : FagTrEwL :
  4. [email protected] : newseditor :
পরিবেশ উন্নয়ন ও সংরক্ষণে সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন : লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল - news ATV
বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫, ০৫:৪৫ পূর্বাহ্ন

পরিবেশ উন্নয়ন ও সংরক্ষণে সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন : লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল

রিপোর্টার নাম
  • আপডেট সময় : শনিবার, ৪ জুন, ২০২২
  • ৩৭৯ Time View

৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস। এ বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে “একটাই পৃথিবীঃ প্রকৃতির ঐক্যতানে টেকসই জীবন”। প্রকৃতি ও পরিবেশ আজ নানা ধরনের সংকট ও বিপর্যয়ের মুখোমুখি। এই সংকট বিশেষ গোষ্ঠি, দেশ বা জাতির নয়, এই সংকট সমগ্র মানবজাতির। প্রকৃতিক ও মানব সৃষ্ট বিভিন্ন কর্মকান্ডের ফলে প্রতিনিয়ত বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ। মানুষের বসবাস উপযোগী বিশ্ব গড়ার লক্ষ্যে দূষণমুক্ত নিরাপদ পরিবেশ অপরিহার্য।
পরিবেশ দূষণরোধে ও পরিবেশের উন্নয়ন এবং সংরক্ষণে সচেতনতা বাড়ানোর জন্যে বিশ্ব পরিবেশ দিবস প্রতি বছর পালন করা হয়। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং পরিবেশগত মানোন্নয়নের জন্যে সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্ব বায়ুমান যাচাই বিষয়ক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান “এয়ার ভিজ্যুয়াল” এর বায়ুমান সূচকে (একিউআই) বাংলাদেশের অবস্থান ১ম স্থান থেকে সরে ৭৩তম এ গিয়ে দাঁড়িয়েছে। সূচকের মান জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি মাসে যেখানে ছিল ৩০০ এন উপরে। যা শুধু অস্বাস্থ্যকর নয় দুর্যোগের পর্যায়ে বলা যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে করোনাকালে যানবাহন কম, ইটভাটা বন্ধ থাকায় বায়ুদূষণের মাত্রা অনেক কমে ছিল। গত বছর বায়ু দূষণের সুচক নেমে দাঁড়িয়েছিলো ৫০ এর নিচে। বিশেষজ্ঞদের মতে করোনাকালে যানবাহন কম, ইটভাটা বন্ধ থাকায় বায়ুদূষণের মাত্রা গত দুই বছর কমে ছিল। কোভিট-১৯ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের ফলে বর্তমানে যানবাহন, কলকারখানা ও অফিসসমূহ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসায় বায়ু দূষণ সূচক গত ছয় মাস ধরে ক্রমাগত উর্ধ্বমুখি। পরিবেশ দূষণ রোধে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
বিশ্ব জুড়ে বন্য প্রাণী হত্যা ও চোরাচালান বেড়েছে, বৃক্ষ নিধন চলছে। নদী-জলাশয় দখল ও ভরাট হচ্ছে। এই অবস্থায় বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে জীববৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখীন। ফলে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে এখনই কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে৷
পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে ১৯৯ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৫৭৮ জাতের পাখি, ১২৪ জাতের সরীসৃপ, ১৯ জাতের উভয়চর প্রাণী রয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে ২৩ প্রজাতির বণ্য প্রাণীর অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন। এই তালিকায় আছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিতাবাঘ, হাতি, অজগর, কুমির, হরিয়াল ইত্যাদি। বিশেষজ্ঞদের মতে বাংলাদেশে ২৭টি বন্য প্রাণী প্রজাতির অস্তিত্ব বিপন্ন। আরো ৩৯টি প্রজাতি হুমকির সম্মুখীন। গত শতাব্দীতে ২০টি প্রজাতি বাংলাদেশ থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এর মধ্যে আছে ৩ ধরনের গন্ডার, বুনো মহিষ, এক ধরনের কালো হাঁস, নীল গাই, কয়েক ধরনের হরিন, রাজ শকুন, মিঠা পানির কুমির প্রভৃতি। মানুষের সুস্থ্যভাবে বেঁচে থাকার এবং স্বাভাবিক জীবন-যাপনের স্বার্থে জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা আবশ্যক। বাংলাদেশের সুন্দরবনের বাঘ, হরিন, কুমির, অজগরসহ বিভিন্ন বন্য প্রাণী হত্যা চলছে। এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে বাঘের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রির বাজার গড়ে উঠেছে। এর সঙ্গে জড়িত সুন্দরবন সংলগ্ন ৪টি উপজেলার স্থানীয় কিছু শিকারী এবং বাইরে থেকে আসা চোরাচালানী চক্র। মূলতঃ কবিরাজি ঔষধ, আধ্যাত্মিক বিশ্বাস, গয়না এবং দর্শনীয় বস্তু হিসেবে বাঘের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রি হচ্ছে। এইভাবে বাঘ নিধন চলতে থাকলে বাংলাদেশ থেকে চিরতরে এই প্রাণিটি হারিয়ে যাবে। বিশ্বে অনেক দেশ থেকে বাঘ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বাংলাদেশের সুন্দরবনে বর্তমানে মাত্র ১০৬টি বাঘ আছে বলে জানা যায়। আমাদের জাতীয় পশু ও বীরত্বের প্রতীক বাঘকে রক্ষা করতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। তানাহলে আমাদের জাতীয় পশু বাঘ চিরতরে এদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের অভিমত জলবায়ু পরিবর্তনে যেসব সংকট সৃষ্টি হবে তা মোকাবেলায় আমাদের প্রস্তুতি যথেষ্ট নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও পরিবর্তিত পরিবেশে টিকে থাকার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি পর্যায়ের দক্ষতা বৃদ্ধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের ভূপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে ধীরে ধীরে। তথ্যমতে, গত ১০০ বছরে বাংলাদেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ০.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে ০.৫ মিটার। বিশেষজ্ঞদের মতে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা ১ মিটার বৃদ্ধি পেলে বৃহত্তর খুলনার শতকরা ৬৫ ভাগ, বরিশালের ৯৯ ভাগ, নোয়াখালীর ৪৪ ভাগ, ফরিদপুরের ১২ ভাগ ও পুরো পটুয়াখালী এলাকা তলিয়ে যাবে। ফলে উদ্বাস্তু হবে দেশের প্রায় ২ কোটি মানুষ। বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছেন ভূপৃষ্ঠের জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও কৃষির পরিবর্তনের মাধ্যমে আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের প্রায় ১৫ কোটি মানুষ পরিবেশগত দুর্যোগের সম্মুখীন হবে। জানা যায়, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে দেশের আভ্যন্তরীণ নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি ঘটবে। ফলে মোট ভূখণ্ডের ২০ ভাগ ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এছাড়া লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে দেশের ৩২ ভাগ ভূমিকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং সুন্দরবনের ৪ লাখ ১৬ হাজার হেক্টর ভূমিসহ বনায়নকৃত বনভূমি পর্যায়ক্রমে ধ্বংস হতে থাকবে। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা পরিবেশগত বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে দায়ী করেছেন, ১। উন্নত বিশ্বের পারমানবিক অস্ত্র পরীক্ষা ২। কলকারখানা ও গাড়ীর কালো ধোঁয়া ৩। শস্য ক্ষেত্রে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার ৪। ফসলের জমিতে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার প্রয়োগ ৫। কলকারখানা থেকে নিক্ষিপ্ত রাসায়নিক বর্জ্য ৬। অপরিকল্পিত ও যত্রতত্র তৈরী করা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ৭। শব্দ দূষণ ৮। বাতাসের বিষাক্ত গ্যাস ৯। নদী ও জলাধার দূষণ ১০। যত্রতত্র বর্জ্য ও ময়লা-আবর্জনা রাখা ১১। বায়ু দূষণ ১২। পানি দূষণ ১৩। অপ্রতুল সুয়ারেজ ১৪। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ ১৫। নদী ও জলাধারে পায়ু বর্জ্য ও শিল্প বর্জ্য নিক্ষেপ করা ১৬। ফসলের জন্যে অধিক পানি সেচ ১৭। অধিকহারে বৃক্ষ নিধন ও বনভূমি উজাড় ১৮। বন্য প্রাণী নিধন ১৯। পাহাড় ও টিলা কেটে ধ্বংস করা ২০। খাল-নালা ও জলাভূমি ভরাট করা ২১। ভূমিক্ষয় ২২। গ্রীণ হাউজ প্রভাব ২৩। আবহাওয়া ভূমন্ডলীর তাপ বৃদ্ধি ২৪। সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ২৫। মরুময়তা ২৬। ওজনস্তর ক্ষয় ২৭। পলিথিন ও প্লাস্টিক দ্রব্যের যথেচ্ছা ব্যবহার ২৮। ধূমপান, তামাক এবং তামাকজাত সামগ্রীর ব্যবহার ইত্যাদি। পরিবেশ বিপর্যয়ের উল্লেখিত ক্ষতিকর দিকগুলো চিহ্নিত করে সেই সাথে ব্যাপক গণসচেতনতা বাড়াতে হবে। এজন্যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচতে হলে আমাদের এখনি যথাযথ পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। পরিবেশ উন্নয়ন ও দূষণ রোধে গণসচেতনতা আরো বৃদ্ধি করতে হবে। আর এই কাজে প্রশাসন ও গণমাধ্যম খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আমাদের সুস্থ্যভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন দূষণমুক্ত নিরাপদ পরিবেশ। পরিবেশ দূষণ ও দূষণরোধে নিজেদের সচেতনতা ও দায়িত্ববোধ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোন একক ব্যক্তি বা সংগঠনের পক্ষে অনেক সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন ধারাবাহিক সম্মিলিত প্রচেষ্টা। এক্ষেত্রে প্রশাসন ও গণমাধ্যমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকা প্রয়োজন। আসুন, পরিবেশের ক্ষতিকর বিষয় সম্পর্কে আমরা নিজেরা সচেতন হই এবং অন্যদেরকে সচেতন করে তোলার মাধ্যমে আমাদের পরিবেশকে নিরাপদ এবং আগামী প্রজন্মের জন্য সুস্থ্য-সুন্দর করে গড়ে তুলি।
লেখক পরিচিতি ঃ
লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল
(শিক্ষক, গবেষক, কলাম লেখক ও সংগঠক)
সভাপতি, বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটি
৫১, ৫১/এ পুরানা পল্টন, ঢাকা।
মোবাইল ঃ ০১৫৫২৬৩১১১৮

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 LiveTV
Theme Customized By LiveTV