1. [email protected] : editor :
  2. [email protected] : facfltd :
  3. [email protected] : FagTrEwL :
  4. [email protected] : newseditor :
"ইসলামের দৃষ্টিতে ভালো কাজের প্রতিযোগিতা "-মুফতী মাসুম বিল্লাহ নাফিয়ী - news ATV
রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫, ০৭:২৯ অপরাহ্ন

“ইসলামের দৃষ্টিতে ভালো কাজের প্রতিযোগিতা “———-মুফতী মাসুম বিল্লাহ নাফিয়ী

রিপোর্টার নাম
  • আপডেট সময় : বুধবার, ৫ অক্টোবর, ২০২২
  • ৩৪৭ Time View

ইসলামের দৃষ্টিতে ভালো কাজের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা এবং তাতে অংশ গ্রহণ জায়েজ (বৈধ)। কারণ কুরআন তিলাওয়াত, মুখস্থকরণ( হিফজ করা), হাদিস পাঠ ও মুখস্থকরণ, ইসলামি বই-পুস্তক পাঠ, ইসলামি সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতা ইত্যাদির মাধ্যমে ঈমানদারের বা আবেদের সৎকর্মে উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। এছাড়াও প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব কুরআন- হাদিস ও দ্বীনচর্চা বৃদ্ধিসহ সভ্যসমাজ বিনির্মাণের সহায়ক।
হযরত সাহাবায়ে কেরামদের রাঃ সৎ কাজের আগ্রহ ছিল অত্যন্ত প্রবল, তাদের প্রতিযোগিতা ছিল নেক বা কাজের। যেমন এ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহ তা’য়ালাও পুণ্যের কাজে প্রতিযোগিতা করার নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘এ বিষয়ে প্রতিযোগীরা প্রতিযোগিতা করুক’ (সুরা : মুতাফফিফিন, আয়াত : ২৬)।অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এরূপ সাফল্যের জন্য সাধকের উচিত সাধনা করা’ (সুরা : সফফাত, আয়াত : ৬১)। দুশ্চিন্তা : অস্ত্র জোগাড়ের সামর্থ্য না হওয়ায় যুদ্ধে যেতে না পারলে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হতো তারা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তাদেরও কোনো অপরাধ নেই, যারা আপনার কাছে বাহনের জন্য এলে আপনি বলেছিলেন তোমাদের জন্য কোনো বাহন আমি পাচ্ছি না, তারা অর্থ ব্যয়ে অসমর্থজনিত দুঃখে অশ্রুবিগলিত চোখে ফিরে যায়।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৯২)। আল্লাহ তা’য়ালা কুরআনুল কারীমের বিভিন্ন সূরার আয়াতে সৎকর্মে প্রতিযোগিতা করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং তার প্রশংসা করেছেন। যেমন: আল্লাহ তাআলা বলেন,“অত:এব তোমরা সৎকাজে প্রতিযোগিতামূলকভাবে এগিয়ে যাও” (সূরা বাকারা: ১৪৮)। সৎকর্মে প্রতিযোগিতা কারীদের প্রশংসা করে এরশাদ হচ্ছে,”আর তারা সৎকর্মে পরস্পরের মধ্যে প্রতিযোগিতা করে আর এরাই হল, সৎকর্ম শীল।” (সূরা আলে ইমরান: ১১৪)। অন্য সূরায় আরো বর্ণিত এই,যে “তারা তো সৎকাজে প্রতিযোগিতা করতো” ( সূরা আন্বিয়া: ৯০)। পুণ্যের কাজে প্রতিযোগিতা করে যারা এগিয়ে যাবে, আল্লাহ তাদের পুরস্কারের ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘তোমরা অগ্রণী হও তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা ও সে জান্নাত লাভের প্রয়াসে, যা প্রশস্ততায় আকাশ ও জমিনের মতো’ (সুরা : হাদিদ, আয়াত : ২১)। আল্লাহ সোবহানাহু বলেন, ‘আর তোমরা তোমাদের প্রভুর ক্ষমার দিকে অগ্রসর হও এবং জান্নাতের দিকে, যার প্রশস্ততা আসমান ও জমিনের সমান’ (সুরা : হাদিদ, আয়াত : ২১)।ভালো কাজে প্রতিযোগিতাকারীদের প্রশংসায় কোরআনে আরো ইরশাদ হয়েছে, ‘তারাই দ্রুত সম্পাদন করে কল্যাণকর কাজ এবং তারা তাতে অগ্রগামী হয়’ (সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ২৮)।
আল্লাহপাক আরো ইরশাদ করেন, ‘যারা আল্লাহর রাস্তায় স্বীয় ধন সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উদাহরণ একটি বীজের মত, যা থেকে সাতটি শীষ জন্মায়। প্রত্যেকটি শীষে একশ করে দানা থাকে। আল্লাহ অতি দানশীল, সর্বজ্ঞ। যারা স্বীয় ধন সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, এরপর ব্যয় করার পর সে অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে না এবং কষ্টও দেয় না, তাদেরই জন্যে তাদের পালনকর্তার কাছে রয়েছে পুরস্কার এবং তাদের কোন আশংকা নেই, তারা চিন্তিতও হবে না (সুরা বাকারাহ: আয়াত: ২৬১-৬২)। তিনি আরো বলেন, ‘যারা আল্লাহর রাস্তায় স্বীয় ধন-সম্পদ ব্যয় করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে এবং নিজের মনকে সুদৃঢ় করার জন্যে তাদের উদাহরণ টিলায় অবস্থিত বাগানের মত, যাতে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়; অতঃপর দ্বিগুণ ফসল দান করে। যদি এমন প্রবল বৃষ্টিপাত নাও হয়, তবে হাল্কা বর্ষণই যথেষ্ট। আল্লাহ তূ’য়ালা তোমাদের কাজকর্ম যথার্থই প্রত্যক্ষ করেন (সূরা বাকারাহ: আয়াত: ২৬৫)। তিনি আরো বলেন, ‘আপনার পালনকর্তা জানেন, আপনি এবাদতের জন্যে দন্ডায়মান হন রাত্রির প্রায় দু’তৃতীয়াংশ, অর্ধাংশ ও তৃতীয়াংশ এবং আপনার সঙ্গীদের একটি দলও দন্ডায়মান হয়। আল্লাহ দিবা ও রাত্রি পরিমাপ করেন। তিনি জানেন, তোমরা এর পূর্ণ হিসাব রাখতে পার না। অতএব তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমা পরায়ন হয়েছেন। কাজেই কোরআনের যতটুকু তোমাদের জন্যে সহজ, ততটুকু আবৃত্তি কর। তিনি জানেন তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হবে, কেউ কেউ আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধানে দেশে-বিদেশে যাবে এবং কেউ কেউ আল্লাহর পথে জেহাদে লিপ্ত হবে। কাজেই কোরআনের যতটুকু তোমাদের জন্যে সহজ ততটুকু আবৃত্তি কর। তোমরা নামায কায়েম কর, যাকাত দাও এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও। তোমরা নিজেদের জন্যে যা কিছু অগ্রে পাঠাবে, তা আল্লাহর কাছে উত্তম আকারে এবং পুরস্কার হিসেবে বর্ধিতরূপে পাবে। তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু (সুরা মুয্যাম্মিল: আয়াত: ২০)।
আবু জর গিফফারি রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ কে কিছু সাহাবি বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, বিত্তবান লোকেরা পুণ্য ও সওয়াবের কাজে এগিয়ে গেছে। আমরা নামাজ যেভাবে পড়ি তারাও আমাদের মতো নামাজ পড়ে। আমরা রোজা রাখি, তারাও আমাদের মতো রোজা রাখে। তারা প্রয়োজনের অতিরিক্ত মাল সদকা করে।’ তিনি বলেন, ‘আল্লাহ কি তোমাদের জন্য এমন জিনিস দান করেননি যে সদকা দিতে পারো? নিশ্চয়ই সব তাসবিহ (সুবহানাল্লাহ) সদকা, সব তাকবির (আল্লাহু আকবার) সদকা, সব তাহমিদ (আলহামদুলিল্লাহ) সদকা, সব তাহলিল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) সদকা, প্রতিটি ভালো কাজের আদেশ ও উপদেশ দেওয়া এবং মন্দ কাজে নিষেধ করা ও বাধা দেওয়া সদকা। এমনকি তোমাদের শরীরের অংশে অংশে সদকা রয়েছে অর্থাৎ তোমাদের প্রত্যেকের স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করাও সদকা।’ তাঁরা বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আমাদের মধ্যে কেউ কাম প্রবৃত্তি চরিতার্থ করবে আর এতেও কি তার সওয়াব হবে?’ তিনি বললেন, ‘তোমরা বলো দেখি, যদি সে হারাম পদ্ধতিতে তা করত, তাহলে কি সে গুনাহগার হতো না? অনুরূপভাবে যখন কেউ বৈধভাবে সে কাজ করবে, সে তার জন্য প্রতিফল ও সওয়াব পাবে’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৩৭৬)।
নেক কাজ ছুটে গেলে দুঃখ প্রকাশ করা : যখন ইবনে ওমর রাঃ এর কাছে এ হাদিস পৌঁছল যে ‘যে ব্যক্তি জানাজায় উপস্থিত হয়ে নামাজ পড়া পর্যন্ত থাকে, তার জন্য এক কিরাত সওয়াব; যে ব্যক্তি জানাজায় উপস্থিত হলো এবং দাফন করা পর্যন্ত উপস্থিত থাকল, তার জন্য দুই কিরাত সওয়াব। তিনি বলেন, ‘আমরা কয়েক কিরাত পর্যন্ত অগ্রসর হতাম’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২২৩২)। রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেন, ‘যখন কিয়ামত কায়েম হবে তখন তোমাদের কারো হাতে একটি বীজ থাকে এবং যদি তা গজানোর আগে কিয়ামত কায়েম না হয়, তবে সে যেন তা রোপণ করে।’ (আল জামে বাইনাস সহিহাইন, হাদিস : ২৬৮৯)। মুমিন নিজে যেমন ভালো কাজ করবে, তেমনি অন্যকেও উৎসাহিত করবে। রাসুলুল্লাহ সাঃ তাঁর কথা ও কাজের মাধ্যমে অন্যকে ভালো কাজে উৎসাহিত করতেন। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা উঁচু ও মহৎ কাজ এবং সৎ মানুষকে পছন্দ করেন এবং নিকৃষ্ট কাজ অপছন্দ করেন ’ (সুনানে তিবরানি, হাদিস : ২৮৯৪)। অন্য হাদিসে মহানবী সাঃ বলেন, ‘তোমাদের কেউ যখন প্রার্থনা করবে তখন সে যেন বেশি বেশি প্রার্থনা করে। কেননা সে তার প্রভুর কাছে প্রার্থনা করছে’ (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ১৭২)। বারিআ ইবনে কাব রাঃ থেকে বর্ণিত,  তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাঃ এর সঙ্গে রাত যাপন করেছিলাম। আমি তাঁর জন্য অজু ও প্রয়োজন পূরণের জন্য পানি আনলাম। তিনি আমাকে বললেন, ‘আমার কাছে চাও।’ আমি বললাম, ‘আমি বেহেশতে আপনার সঙ্গ লাভ করতে চাই।’ তিনি বললেন, ‘তাহলে অধিক পরিমাণ সিজদার দ্বারা—তুমি নিজের স্বার্থেই—আমাকে সাহায্য করো ’ (সহিহ মুসলিম, আয়াত : ১১২২)।
প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন পুরষ্কারের প্রদানের মাধ্যমে বিজয়ীকে সম্মানি দেওয়াও জায়েজ নেওয়াও জায়েজ। কেননা এটা মূলত: কুরআনুল মাজীদের তিলাওয়াত, মুখস্থকরণ, জ্ঞানর্চার বা দ্বীনী কাজের প্রতিদান নয় বরং এটা প্রতিযোগীর সময় ও শ্রমের মূল্যায়ন এবং মেধার স্বীকৃতি। এর মূল পুরষ্কার সে আখিরাতে অর্জন করবে ইনশাআল্লাহ। তবে শর্ত হল, যারা এসব প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করবে তাদের অন্তরে খুলুসিয়াত তথা এ নিয়ত থাকতে হবে যে, তাদের এ সকল কার্যক্রমের আসল পুরষ্কার মহান আল্লাহ তাদেরকে আখিরাতে দান করবেন। দুনিয়ার এই পুরষ্কার তাদের তার মূল টার্গেট নয়। যেমন: মসজিদের ইমাম, ধর্মীয় শিক্ষক, দাঈ, ওয়ায়েজ প্রমূখ ব্যক্তিগণ তাদের দীনী কার্যক্রমের বিনিময়ে বেতন/পারিশ্রমিক গ্রহণ করে এবং বিভিন্ন অবদানের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে পুরষ্কার, অর্থকড়ি, সার্টিফিকেট ও সম্মাননা গ্রহণ করে। কিন্তু এগুলো তাদের সৎকর্মের বিনিময় নয় বরং তাদের কষ্ট, পরিশ্রম ও মেধার সামান্য মূল্যায়ন এবং পারিশ্রমিক মাত্র। আখিরাতে সে মহান আল্লাহর নিকট প্রকৃত সওয়াব (প্রতিদান) লাভ করবে। এই নিয়তেই তাকে এ সকল দীনের কাজ আঞ্জাম দিতে হবে; অন্যথায় সে গুনাহগার হবে।উল্লেখ্য প্রতিযোগার বিষয়ে সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতী বিশিষ্ট ফকিহ আল্লামা শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বায রাহ. বলেন,“কুরআন প্রতিযোগিতায় বিশাল কল্যাণ রয়েছে। সুতরাং যদি কুরআনের সহজ কিছু অংশ মুখস্থ করা বা কুরআন গবেষণা করে সেখান থেকে হুকুম-আহকাম ও উপকারী বিষয়াদি উদ্ভাবন করার বিনিময়ে যদি প্রতিযোগীদেরকে সহায়তা করা হয় তাহলে এটা ‘পারিশ্রমিক’ ও ‘উৎসাহ প্রদান’-এর অন্তর্ভুক্ত। এতে কোনও সমস্যা নাই। বরং এটা জুয়ালা (বিশেষ কোনও কাজের জন্য অগ্রিম পুরস্কার বা পারিশ্রমিক ঘোষণা করা) এর অন্তর্ভুক্ত। এতে কোনও অসুবিধা নেই” (binbaz)।
ইসলামি সংস্থা বা সংগঠন ক্বিরাত প্রতিযোগিতার আয়োজন করে ও পুরস্কার নির্ধারণ করে, তাহলে তা জায়েজ হবে (মালামুদ্দা মিনহু-১৫১,১৫২)। তবে শর্ত হল, প্রতিযোগীর বা আয়োজনকারীর উদ্দেশ্য থাকতে হবে, দ্বীন-ইসলামের কাজের প্রচার-প্রসার এবং মানবকল্যাণকর কাজের জন্য মানুষকে উৎসাহ প্রদান।

লেখকঃ মুফতী মাসুম বিল্লাহ নাফিয়ী

প্রধান সমন্বয়ক

বাংলাদেশ সোস্যাল অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 LiveTV
Theme Customized By LiveTV