বিষয়ক নাগরিক সংগঠন “ধরিত্রী রক্ষায় আমরা- (ধরা)” এবং “সুন্দরবন রক্ষায় আমরা” এর উদ্বেগ প্রকাশ
গতকাল ৪ মে, ২০২৪, শনিবার সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক নাগরিক সংগঠন “ধরিত্রী রক্ষায় আমরা- (ধরা)” এবং “সুন্দরবন রক্ষায় আমরা”।
“ধরিত্রী রক্ষায় আমরা- (ধরা)” এর সদস্য সচিব শরীফ জামিল এবং “সুন্দরবন রক্ষায় আমরা”এর সমন্বয়ক নূর আলম শেখ এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদে আমরা জানতে পেরেছি গতকাল ৪ মে, ২০২৪, শনিবার বাগেরহাটের সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের আমরবুনিয়া এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার সুন্দরবনের লতিফের ছিলা নামক জায়গায় আগুন এই আগুন লাগার খবর পাওয়া যায়। শনিবার দুপুরে স্থানীয় জেলেরা সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের আমুর বুনিয়া টহল ফাঁড়িসংলগ্ন বনাঞ্চলে আগুন দেখতে পান। তবে কি কারণে সুন্দরবনের গহীনে এই অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে তা জানতে পারেনি বন কর্তৃপক্ষ। তারা এটিও জানতে পারেনি যে, বনের ভেতর কি পরিমাণ জায়গা পুড়েছে এই অগ্নিকাণ্ডে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকেও বনের মধ্যে অর্ধশতাধিক স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে আগুন ও ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা গেছে। তাঁদের ধারণা, আগুন লাগছে অন্তত দুই দিন আগে। ঘটনাস্থল বন বিভাগের অফিস থেকে বেশ দূরে। ওই এলাকায় বাঘসহ বন্য প্রাণীর উপস্থিতি অনেক বেশি। তাই মানুষের প্রবেশ কম। এ জন্য খবর পেতে দেরি হয়েছে।
সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এই বিবৃতিতে “ধরিত্রী রক্ষায় আন্দোলন- (ধরা)” এর সদস্য সচিব বলেন, প্রতিবছরই এই সময়ে সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ড হচ্ছে। এখানে বিভিন্ন চক্র রয়েছে যারা এই ধরনের অগ্নিকাণ্ডের সাথে যুক্ত থাকে। সুন্দরবনের উপর দিয়ে একটা ড্রোন উড়লে বন বিভাগ জানতে পারে, কিন্তু অগ্নিকাণ্ডের দুই দিন হয়ে গেলেও বন বিভাগ জানতে পারে না। আমরা মনে করি, সুন্দরবনের এই ধরনের অগ্নিকাণ্ড কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এই ষড়যন্ত্রকে রুখে দিতে বন বিভাগকে আরো সচেষ্ট হতে হবে। ধরা এর পক্ষ থেকে আমরা দাবি জানাচ্ছি যে, দ্রুত দোষীদের খুঁজে বের করে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে যাতে ভবিষ্যতে এধরনের অগ্নিকাণ্ড থেকে সুন্দরবনকে রক্ষা করা যায়।
“সুন্দরবন রক্ষায় আমরা” এর সমন্বয়ক মো: নূর আলম শেখ বলেছেন, মানবসৃষ্ট সুন্দরবনের পরিকল্পিত অগ্নিকান্ড বন্ধে বনবিভাগসহ সরকারকে গুরুত্ব দিতে হবে। সুন্দরবন সংরক্ষিত বনাঞ্চল হলেও আমুরবুনিয়া টহল ফাঁড়ি অঞ্চলে চোরা শিকারীসহ মানুষের অবাধ যাতায়াত রয়েছে। পরিবেশকর্মী, সংবাদকর্মী, গবেষক ও বিশেষজ্ঞদের মতামত উপেক্ষা এবং অতীতে সংগঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন না করার কারণেই সুন্দরবনের আমুরবুনিয়া এলাকায় চার বছর পরে আবারো অগ্নিকান্ড সংগঠিত হলো।
উল্লেখ্য, গত ২৪ বছরে সুন্দরবনে ২৬ বার আগুন লেগে সরকারি হিসেবে প্রায় ৭৫ একর বনভূমি ধ্বংস হয়েছে। মুনাফালোভী মাছ ব্যবসায়ী ও অসৎ বনকর্মর্তার যোগসাজশে এবং অদক্ষ মৌয়ালদের কারণে সুন্দরবনে বারে বারে আগুন লাগছে। এর দায়ভার বনবিভাগ কোনভাবেই এড়াতে পারেনা।
তাই এশিয়ার ফুঁসফুঁস সুন্দরবনে মানবসৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন এবং এই ধরনের কর্মকান্ড বন্ধে বনবিভাগ ও অনান্য আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্য, পরিবেশকর্মী, সুন্দরবন গবেষক ও বিশেষজ্ঞ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিকসহ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে।