আমরা ইতোমধ্যে অবগত আছি, ট্রাম্পের ঘোষণামতে মার্কিন বি-২ বোমারু বিমান ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায়—ফর্দো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহানে—বোমা হামলা চালানোর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে জড়িয়ে গেল। অর্থাৎ ইউক্রেন যুদ্ধকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র যে বিশ্বযুদ্ধ শুরু করেছিল, তা প্রকাশ্যে চলে এসেছে।
এখন বাংলাদেশের জনগণ যেহেতু একটা বৃহত্তর মুসলিম উম্মাহর অংশ, সেদিক থেকে এই যুদ্ধের তাৎপর্য বুঝতে পারা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ইসলামের প্রাথমিক যুগের ইতিহাসের সঙ্গে গোত্রীয় সংঘাত ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকার ফলে পরবর্তী নানান ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে এই গোত্রবাদী স্বার্থের দিকটি রয়ে গিয়েছে। তাই আমরা চাই বর্তমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনের উছিলায় ইসলামের সকল সম্ভাবনাগুলোকে খতিয়ে দেখতে। অর্থাৎ একটা নতুন ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় তৃতীয় বিশ্বের প্রান্তীয় জনগোষ্ঠী আকারে আমাদের সাম্রাজ্যবাদবিরোধী লড়াই-সংগ্রামের নিরিখে এই যুদ্ধকে আমরা কি করে বুঝব তা ঠিক করা। এই সংগ্রামে ইসলামকে তার নৈতিক-রাজনৈতিক (ethico-political) প্রস্তাবনাগুলোর আলোকে কিভাবে নতুন করে পাঠ করা যেতে পারে।
ইরান-ইসরায়েলের যুদ্ধকে ন্যায্যতা দিতে মার্কিন গণমাধ্যমে যেভাবে মাহদিবাদী এভ্যাঞ্জেলিকাল বয়ানগুলো সামনে নিয়ে আসা হচ্ছে, আমরা টের পাই পাশ্চাত্যের এই যুদ্ধব্যবসায়ী মিলিটারি-ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স এবং পারমাণবিক প্রতিযোগিতার আড়ালে আসলে পুরাতন অনন্ত ক্রুসেডের ধর্মতাত্ত্বিক প্রেরণাই কাজ করছে।
ইসরায়েলের সঙ্গে ভারতের একটা গভীর মতাদর্শিক, প্রযুক্তিগত ও ভূরাজনৈতিক সম্বন্ধ রয়েছে এবং ভারতীয় উপমহাদেশে একটা হিন্দুত্ববাদী এবং ইসলাম নির্মূলের রাজনীতির বিকাশ ঘটানোই সম্মিলিত
মার্কিন-ইসরায়েলি-ভারতীয় প্রকল্পের অংশ। অতএব একটা রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী আকারে আমাদের বাস্তবিকভাবে টিকে থাকার বা অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্নের সঙ্গে এই যুদ্ধের পর্যালোচনা জড়িত।
—সম্রাট শাহজাহান।