পিআর পদ্ধতি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব নাকি ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসনের পরিকল্পনা?
বাংলাদেশের জন্য কেন “পিআর পদ্ধতি” উপযোগী নয় , যেখানে আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে প্রবেশের সুযোগ পাবে এ সকল বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা শুরু করা যাক।
PR (Proportional Representation) পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে এখন অনেক আলোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে বিএনপি এটির বিরোধিতা করছে, অপরদিকে জামায়াতে ইসলামী ও অন্যান্য ইসলামপন্থী ছোট দলগুলো এই পদ্ধতির প্রতি আগ্রহী। নিচে এই পদ্ধতিটি কী, কেন এটি নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে এবং এর সুবিধা-অসুবিধাগুলো বিশ্লেষণ করবো বাস্তবতা নিরিখে:
পিআর (Proportional Representation) পদ্ধতি কী?
Proportional Representation (PR) অর্থাৎ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন পদ্ধতি হলো একটি ব্যবস্থা যেখানে রাজনৈতিক দলসমূহ নির্বাচনে প্রাপ্ত মোট ভোটের অনুপাতে আসন পায়।
বাংলাদেশে বর্তমানে প্রচলিত FPTP (First Past the Post) বা “প্রত্যক্ষ ভোটে বিজয়ী” পদ্ধতির বিপরীতে, PR পদ্ধতিতে ভোট দেয়ার পরে জনপ্রিয়তা অনুযায়ী আসন বরাদ্দ হয়।
উদাহরণ:
• যদি একটি দল ১০% ভোট পায়, তবে তারা জাতীয় সংসদে মোট আসনের আনুমানিক ১০% পেতে পারে অর্থাৎ ৩০০ আসন হিসেবে ৩০ টি আসন পাবে।
পিআর পদ্ধতির সুবিধা:
• ছোট দলের সুযোগ বৃদ্ধি পায়
ছোট দলগুলো জাতীয় পর্যায়ে জিততে না পারলেও PR পদ্ধতিতে তাদের ভোট অনুযায়ী সংসদে প্রতিনিধিত্ব পায়। ফলে দলীয় বৈচিত্র্য বাড়ে।
• ভোটের অপচয় কমে যায়
একজন প্রার্থী না জিতলেও তার দলের ভোট হিসেব হয়। ফলে জনগণের ভোট “নষ্ট” হয় না।
• সমঝোতাভিত্তিক রাজনীতি উৎসাহিত হয়
বড় দলগুলো এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় না বলে জোট সরকার গঠন করতে হয় — এতে আলোচনা ও আপসের সংস্কৃতি বিকাশ হয়।
• গণতান্ত্রিক প্রতিনিধি বৈচিত্র্য বৃদ্ধি পায়
নারী, সংখ্যালঘু, ধর্মভিত্তিক ও আদিবাসী দলের মতো গ্রুপগুলোর প্রতিনিধি সংসদে সহজেই ঢুকতে পারে।
পিআর পদ্ধতির অসুবিধা:
• অস্থিতিশীল সরকার গঠনের ঝুঁকি
ছোট ছোট দল নিয়ে জোট সরকার তৈরি হয় — এতে সরকার টেকসই নাও হতে পারে, বা সহজে ভেঙে যায়।
• উগ্রবাদী দলের প্রবেশাধিকারের ঝুঁকি
অল্প ভোট পেলেও একটি দল সংসদে আসন পেতে পারে — এতে ধর্মীয় বা চরমপন্থী দলগুলোর প্রবেশ ঘটতে পারে।
• জনগণের সঙ্গে সংসদ সদস্যের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক থাকে না ভোটাররা সরাসরি প্রার্থী নয়, দলকে ভোট দেয় — এতে নির্বাচিতদের জবাবদিহিতা কমে।
• জটিলতা ও বিভ্রান্তির সুযোগ
বাংলাদেশে সাধারণ মানুষ PR পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত নয়, ফলে বিভ্রান্তি ও অভিযোগ বাড়তে পারে।
বিএনপি ও ইসলামি দলগুলোর অবস্থান:
• বিএনপি মনে করে PR পদ্ধতি ইসলামি ছোট দলগুলো সংসদে স্থান পেয়ে সরকার গঠনের সমর্থনে ব্যবহার হবে যা সরকার গঠনে পরবর্তী জটিল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
• জামায়াত ও অন্যান্য ইসলামি দল PR পদ্ধতিতে লাভবান হতে পারে কারণ তারা প্রত্যক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বিতায় না জিতলেও মোট ভোটের কিছু অংশ পেয়ে সংসদে জায়গা পেতে পারে।
পিআর পদ্ধতি একদিকে জনগণের বৈচিত্র্যময় মতামতকে সংসদে প্রতিফলিত করে, অন্যদিকে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। বাংলাদেশে যদি এটি বাস্তবায়ন হয়, তবে রাজনৈতিক সংস্কৃতি, দলীয় শৃঙ্খলা ও জবাবদিহিতার ওপর বড় প্রভাব ফেলবে।
PR পদ্ধতিতে জনগণ সরাসরি প্রতিনিধিকে ভোট না দিয়ে রাজনৈতিক দলকে ভোট দেয় এর ফলাফল কী?
জবাবদিহিতাহীন এমপি নির্বাচন । দল যদি আগে ভোট পায়, পরে এমপি “মনোনীত” করে ডাজনগণ আর সরাসরি কাউকে নির্বাচিত করছে না।
এতে জনগণ-প্রতিনিধি সম্পর্ক ভেঙে যায়, জবাবদিহিতা হয় শুধুই নেতার কাছে, জনগণের কাছে নয়।
দলপ্রধান হয়ে উঠবে সর্বময় কর্তা রাজনৈতিক ‘মাফিয়া’
দলপ্রধানরাই নির্ধারণ করবেন কে এমপি হবেন। ফলে চাটুকার, অনুগত এবং বিত্তবানরাই সুযোগ পাবে। টাকা, পদ, ধর্মীয় পরিচয়, ক্ষমতার লেনদেন হবে এই বাছাই প্রক্রিয়ায়।
ফলে দল প্রধানের চারপাশে ‘দালাল সিন্ডিকেট’ গড়ে উঠবে।
চরমপন্থা-উগ্রবাদে সুযোগ সৃষ্টি ধর্মীয় উগ্রপন্থী, সাম্প্রদায়িক বা আধা-সন্ত্রাসী সংগঠন ২-৩% ভোট পেলেই সংসদে ঢুকে পড়তে পারবে।
তারা নিজেদের গোষ্ঠীগত এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করবে — জাতীয় স্বার্থ নয়, গোষ্ঠীর স্বার্থ বড় হয়ে উঠবে।
খিচুড়ি সংসদ’ – বহু মত ও স্বার্থের টানাহেঁড়ি
একেকটা দল একেকটা শ্রেণী বা সম্প্রদায়কে প্রতিনিধিত্ব করবে কেউই জাতীয় স্বার্থে একমত হবে না।
বিল পাস হবে না, নীতিমালা বাস্তবায়ন হবে না, হট্টগোলেই চলবে সংসদ।
সরকার গঠনে বারবার জোট ভেঙে যাবে — ‘নির্বাচন-নির্বাচন খেলা’ শুরু হবে।
রাষ্ট্রযন্ত্র স্থবির হয়ে পড়বে, জনগণ ছিটকে পড়বে উন্নয়ন ও নিরাপত্তা থেকে।
সম্ভাব্য ভয়াবহ পরিণতি:
জনপ্রতিনিধিত্ব সরাসরি ভোটে নয়, সুতরাং সে ‘ভাগ-বাঁটোয়ারা’ নিয়ে ব্যস্ত থাকবে।
জবাবদিহিতা সম্পূর্ণ নেতার কাছে কেন্দ্রীভূত জনগণের এখানে কথা বলার কোন সুযোগ থাকবে না।
চরমপন্থা সহজে প্রবেশাধিকার ও সংগঠিত হয়ে প্রভাব বিস্তার করবে।
নীতি ও শাসন দুর্বল, বৈচিত্র্যপূর্ণ অথচ দ্বিধান্বিত
রাষ্ট্র ও সমাজ সম্ভাব্য ভাঙন, রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা ও জনবিচ্ছিন্নতা প্রকট ধারণ করবে।
তাহলে কি PR পদ্ধতি একেবারেই খারাপ?
না, বিশ্বের কিছু উন্নত গণতান্ত্রিক দেশে (যেমন: সুইডেন, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি) PR ব্যবস্থায় সুশাসন সম্ভব হয়েছে। তবে তাদের সমাজে—
রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিণত, দলগুলো জবাবদিহিতামূলক ও আদর্শিক, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী এবং নিরপেক্ষ।
বাংলাদেশে যেখানে: রাজনৈতিক আদর্শ দুর্বল, দলে গণতন্ত্র নেই,নেতারাই ‘সব কিছু’ নির্ধারণ করেন, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন প্রশ্নবিদ্ধ —
সেখানে PR পদ্ধতি বাস্তবায়ন হলে জনগণ ‘ভোট দিয়ে ক্ষমতা ছাড়াবে, কিন্তু ফেরত পাবে না’ সেবা ।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে PR পদ্ধতি বর্তমানে ভয়াবহ অনিশ্চয়তা ও রাজনৈতিক দেউলিয়াপনার রাস্তাই প্রশস্ত করতে পারে। জনগণ সরাসরি প্রতিনিধিকে না বেছে দলকে ভোট দিলে জনপ্রতিনিধিত্ব দুর্বল হবে, দুর্নীতি ও সিন্ডিকেট রাজনীতি বেড়ে যাবে,ধর্মীয় বা শ্রেণিগত বিভাজন তীব্র হবে।
বিশ্বের অনেক দেশেই সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি (Proportional Representation – PR) ব্যবহার হয়, তবে এই পদ্ধতির ধরন, কাঠামো এবং সফলতা বা ব্যর্থতা দেশভেদে ভিন্ন। নির্বাচন পদ্ধতির ধরন মন্তব্য
জার্মানিমিশ্র PR (Mixed-member proportional)সফল উদাহরণ, তবে জোটর রাজনীতি জটিলতর।
নেদারল্যান্ডসপূর্ণ PR (Closed list)খুবই খণ্ডিত সংসদ, ১৫+ দল থাকে।
সুইডেন খোলা তালিকা PRস্থিতিশীল, কিন্তু ছোট দলকেও জোটে দরকার পড়ে।
ইসরায়েল শুদ্ধ PR (nationwide) অতিমাত্রায় খণ্ডিত, উগ্রপন্থার আগমন ঘটে যার জন্য ইসরাইল যুদ্ধ হতে বের হতে পারে না, মুসলিম হত্যাকাণ্ড থেকে নিজেদেরকে থামাতে পারে না।
ইতালি মিশ্র (FPTP + PR)দীর্ঘকাল রাজনৈতিক অস্থিরতা।
বেলজিয়াম PR ভাষাগত বিভক্তি, সরকার গঠনে সময় লাগে কারণ এই দুই ভাগে বিভক্ত দুটি গ্রুপ তাদের নিজ নিজ ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে চায় রাষ্ট্র কাঠামোকে ব্যবহার করে।
নরওয়ে ,ফিনল্যান্ড PR স্থিতিশীল, কারণ রাজনৈতিক সংস্কৃতি শক্তিশালী।
ভারত (রাজ্যপাল নিযুক্তি/RS ভোট)আংশিক PRশুধুমাত্র রাজ্যসভায় PR প্রয়োগ ।
PR পদ্ধতিতে নির্বাচন হয় এমন দেশের তালিকা তারা কী কী সমস্যা বা সংকটে পড়েছে বাস্তব উদাহরণসহ বিস্তারিত বিশ্লেষণ PR পদ্ধতিতে নির্বাচন হয় যে দেশগুলোতে:
কোন ধরনের সমস্যা বা সংকট দেখা দিয়েছে?
খণ্ডিত সংসদ ও দুর্বল জোট সরকার
ইসরায়েল:
• প্রায় ১২-১৫টি দল থাকে প্রতি নির্বাচনে।
• চরমপন্থী, ধর্মীয় দল ৫-৬% ভোট পেলেও সরকারে আসে।
• জোট ভেঙে পড়লে বারবার নির্বাচন।
• উদাহরণ: 2019-2022 এর মধ্যে ৫টি জাতীয় নির্বাচন হয়েছে।
ইতালি:
• ১৯৪৬ থেকে ২০২২ পর্যন্ত ৭০টির বেশি সরকার বদলেছে।
• কারণ: PR পদ্ধতিতে স্থায়ী সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া কঠিন।
চরমপন্থী ও অদ্ভুত দলগুলোর উত্থান
জার্মানি (Weimar Republic era):
• ১৯৩০-এর দশকে PR ব্যবস্থায় নাৎসি পার্টি ৩০% ভোট পেয়েও সংসদে বিশাল শক্তি অর্জন করে।
• ফল: হিটলারের উত্থান। PR ব্যবস্থার তীব্র সমালোচনা হয়।
ইসরায়েল:
• “Religious Zionist Party”, “Shas”, “United Torah Judaism” — ধর্মীয় আইন প্রবর্তনে চাপ দেয় সংসদে।
প্রশাসনিক অস্থিরতা ও বিলম্বিত সরকার গঠন
বেলজিয়াম:
• ভাষাগত বিভাজন (Dutch vs French) ও PR পদ্ধতির কারণে সরকার গঠন করতে ৫৪১ দিন সময় লেগেছিল 2010-11 সালে।
• এটা ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের “অস্থায়ী সরকার”।
নেদারল্যান্ডস:
• ২০২১ সালের নির্বাচনের পর সরকার গঠনে লেগেছে প্রায় ৯ মাস, কারণ ১৭টি দল সংসদে ঢুকেছিল।
নীতিগত সিদ্ধান্তে বিলম্ব ও রাজনৈতিক লেনদেনের সংস্কৃতি
• জোট সরকার মানে একাধিক দলের সমঝোতা।
• এতে নীতির বদলে দরকষাকষির রাজনীতি চলে আসে।
উদাহরণ:
• কর সংস্কার বিল আটকে থাকা (জার্মানি)
• শিক্ষা বা ধর্মীয় আইন নিয়ে বিরোধ (ইসরায়েল)
তাহলে কী উপসংহার দাঁড়ায়?
PR ব্যবস্থার প্রতিক্রিয়া
✅রাজনৈতিক বৈচিত্র্য বাড়ে।
✅ছোট দলের সুযোগ বাড়ে
❌স্থিতিশীল সরকারদুর্বল।
❌ জনসংযোগ কমে।
❌ চরমপন্থাপ্রবেশ পায়।
❌ প্রশাসনিক বিলম্ব প্রায়শ হয় ।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সতর্কতা
বাংলাদেশে:
• রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরে গণতন্ত্র দুর্বল।
• দলপ্রধান কর্তৃত্ববাদী।
• প্রশাসন দলকেন্দ্রিক।
• আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ,
এই পরিস্থিতিতে PR পদ্ধতি চালু হলে:
• দলনির্ভর এমপি নিয়োগ নেতা এক নায়ক হয়ে যায়।
• ছোট দলের নামে চরমপন্থী গোষ্ঠী সংসদে ঢুকবে,
• জোট সরকার হবে দুর্বল ও অস্থির।
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চাচ্ছে কিছু ইসলামিক সহ ছোট ছোট রাজনৈতিক দলগুলো। মজার বিষয় হচ্ছে পিয়ার পদ্ধতিতে নির্বাচনের পক্ষে ইন্ডিয়া সমর্থিত বাংলাদেশের প্রক্সি হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ প্রমাণিক পিআর সিস্টেমে নির্বাচন চায়। তাহলে কি ধরে নেওয়া যায় PR নামে আওয়ামীলীগ কো প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র?
ধরা যাক, আওয়ামী লীগ (AL) কার্যত নিষিদ্ধ, অর্থাৎ:
দল হিসেবে রেজিস্ট্রেশন বাতিল হয়েছে,প্রার্থিতা বা সরাসরি অংশগ্রহণে বাধা রয়েছে,
নাম ও প্রতীক ব্যবহার নিষিদ্ধ।
এ অবস্থায়, PR (Proportional Representation) পদ্ধতিতে আওয়ামী লীগ কীভাবে পরোক্ষভাবে বা বিকল্প কৌশলে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে — সেটাই এখন বিশ্লেষণ করব।
PR পদ্ধতির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ যে রাজনৈতিক ‘চালাকি’ বা কৌশল নির্বাসনে অংশ নিতে পারে:
PR পদ্ধতি দলভিত্তিক ভোট নির্ধারণ করে — জনগণ দলকে ভোট দেয়, দল এমপি মনোনয়ন দেয়।
এই কাঠামো আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হলেও পরোক্ষ অংশগ্রহণের পথ খুলে দেয় কিছু ‘চালাক’ কৌশলে:
১. ছদ্মনামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে।
আওয়ামী লীগের মূল সংগঠন নিষিদ্ধ হলেও, নতুন নামে নিবন্ধিত দল গঠন করা যায়, যেমন:
“গণতান্ত্রিক উন্নয়ন ফ্রন্ট”
“স্বাধীনতা প্রগতিশীল মঞ্চ”
এই ধরনের নতুন দল আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠদের দিয়ে পরিচালিত হয়, ব্যাকডোর থেকে AL নিয়ন্ত্রণ করে।
উদাহরণ:
পাকিস্তানে PPP বা PML নিষিদ্ধ হলে নতুন নামে দল তৈরি করে সেনাপ্রশাসনের সহযোগিতায় ভোটে অংশ নিয়েছে।
২. আঞ্চলিক বা ছোট দলের ভিতরে ঢুকে পড়া PR ব্যবস্থায় ছোট দলের ২-৩% ভোট পেলেই সংসদে আসন পায়। আওয়ামী লীগ তার সাবেক নেতাকর্মীদের ছড়িয়ে দিবে বিভিন্ন ইসলামি, প্রগতিশীল বা জাতিগত দলে সেখানে তারা ভোটে অংশ নিবে, ভোট পাবে , পরে AL-এর মতো আচরণ করবে।
ফল: যদিও দল নিষিদ্ধ, কিন্তু আওয়ামীমনা লোকেই সংসদে।
৩. জোট ভিত্তিক অংশগ্রহণ : PR পদ্ধতিতে জোট করে ভোটে অংশ নেওয়া সহজ। আওয়ামী লীগ সরাসরি না থাকলেও জোটে প্রভাবশালী দল হিসেবে থাকবে, অর্থাৎ নেপথ্যে থাকবে।
গোপন সমঝোতায় অন্য দল ক্ষমতায় আসলে, AL সমর্থিত ব্যক্তিরাই কৌশলগত পদে নিয়োগ পাবে।
৪. ভোটপ্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে থাকলে ছায়া-প্রার্থিতা যদি নির্বাচন কমিশন বা প্রশাসন AL-ঘনিষ্ঠ থাকে,
তাহলে দল নিষিদ্ধ হলেও AL প্রভাবিত দলগুলোকে অতিরিক্ত সুযোগ, অনৈতিক সুবিধা দেওয়া হয়।
উদাহরণ:
আফগানিস্তানে তালেবান সরকার বিরোধী দলকে নিষিদ্ধ করে অনুগতদের “স্বাধীন প্রার্থী” হিসেবে দাঁড় করায়।
৫. রাজনৈতিক মামলার নিষ্ক্রিয়তা বা আইনগত মারপ্যাঁচ দল নিষিদ্ধ, কিন্তু প্রাক্তন সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা নিষ্ক্রিয় রাখা হয়। তারা “স্বতন্ত্র” বা অন্য পরিচয়ে দাঁড়ায়, কিন্তু মূল নীতিতে AL-এর প্রতিনিধি হিসেবেই কাজ করে।
কেন PR পদ্ধতিতে এটা সম্ভব, FPTP-তে না?
বৈশিষ্ট্য PR FPTP
দলভিত্তিক ভোট ✅ ❌
প্রার্থীভিত্তিক সম্পর্ক ❌ ✅
ছদ্ম দল দিয়ে জয় সম্ভব ✅❌
সংগঠনের ব্যাকডোর নিয়ন্ত্রণ। ✅❌
গোপন রাজনৈতিক প্রবেশ ✅❌
ঝুঁকি কী?
জনগণ জানবে না আসলে কে ক্ষমতায় আছে। চরমপন্থী বা উগ্রবাদী দল যেমন প্রবেশ করবে,
নিষিদ্ধ পুরনো দলগুলোও ছদ্মবেশে ফিরে আসবে। এটা গণতন্ত্রের ছদ্মবেশে দালালতন্ত্র কায়েমের পথ খুলে দেবে।
উপসংহার:
PR পদ্ধতি যেখানে দলই ভোট পায়, এবং দলই সংসদ সদস্য মনোনীত করে সেখানে নিষিদ্ধ দলের ছায়া-প্রবেশ সম্ভব অনেকভাবে নতুন দল গঠন করে,জোটে ঢুকে,প্রতীক বা পরিচয় পাল্টে, ছায়া-নেতৃত্ব দিয়ে,প্রশাসনিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে।
PR পদ্ধতি গণতন্ত্রের একটি পরিপক্ব রূপ — কিন্তু তা কার্যকর হয় রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক পরিপক্বতা থাকলে।
বাংলাদেশে তা এখনই উপযুক্ত নয়।
না হলে, ‘প্রতিনিধিত্বের নামে’ ক্ষমতার রিমোট কন্ট্রোল চলে যাবে কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর হাতে —যার মূল্য দিতে হবে সাধারণ মানুষকে।
✍️লায়ন মোহাম্মদ আল আমিন, সাবেক ছাত্রনেতা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।