বরিশালের মুলাদি উপজেলায় সম্পত্তি ভাগাভাগি নিয়ে ভাইদের মধ্যে ভয়াবহ সহিংসতা এটি নিছক একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং বাংলাদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অবক্ষয়ের প্রতীক। এখন একটু বিশ্লেষণ করে বলি—
কেন এমন ঘটছে?
1. পারিবারিক মূল্যবোধের ভাঙন
আগে পরিবার ছিল পারস্পরিক সহযোগিতা, ভালোবাসা আর শ্রদ্ধার জায়গা। এখন অর্থ, সম্পত্তি ও ক্ষমতার লোভ সেই সম্পর্ককে নষ্ট করে দিচ্ছে।
2. আইন ও বিচার ব্যবস্থার প্রতি অনাস্থা
মানুষ মনে করে আদালতে গেলে বছরের পর বছর মামলা চলবে, খরচ বাড়বে, ফল মিলবে না। তাই নিজেরাই “আইন হাতে তুলে নেয়”।
3. রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা
রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সমাজে একটি অপসংস্কৃতি তৈরি করেছে—যেখানে শক্তিই ন্যায়, আর ক্ষমতাশালীরা সবসময় রক্ষা পায়।
4. শিক্ষা ও নৈতিকতার ঘাটতি
শিক্ষার মূল লক্ষ্য জ্ঞান অর্জন হলেও নৈতিক শিক্ষা ও মানবিকতার চর্চা প্রায় হারিয়ে গেছে।
5. অর্থনৈতিক চাপ ও হতাশা
দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও সামাজিক বৈষম্য মানুষকে আরও নির্মম করে তুলছে।
এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যৎ কী হতে পারে?
সামাজিক অরাজকতা বৃদ্ধি পরিবারে, গ্রামে, শহরে আইনহীনতার প্রবণতা বাড়বে।
বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা শূন্যে নেমে যাবে মানুষ নিজেরাই “বিচার” করতে চাইবে।
সহিংসতার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা ছোটখাটো ঝগড়া-ঝাঁটি থেকে শুরু করে খুনখারাবি নিয়মিত হবে।
রাষ্ট্র দুর্বল হয়ে পড়বে যদি আইন-শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে, তবে অপরাধী চক্র, মাফিয়া আর দখলদাররা সমাজ চালাবে।
উত্তরণের পথ
1. আইন-শৃঙ্খলা ও বিচার ব্যবস্থার সংস্কার
দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল কার্যকর করা।
গ্রাম ও ইউনিয়ন পর্যায়ে বিনামূল্যে আইন সহায়তা জোরদার করা।
2. মানবিক ও নৈতিক শিক্ষা পুনঃপ্রবর্তন
স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মন্দির, সামাজিক সংগঠনে নৈতিকতা শেখানো।
মিডিয়ায় “সহানুভূতি, ক্ষমা, মানবিকতা” বিষয়ক প্রচার বাড়ানো।
3. পারিবারিক বিরোধ মীমাংসার বিকল্প ব্যবস্থা
ইউনিয়ন পরিষদ, সালিশি বোর্ডকে নিরপেক্ষ ও কার্যকর করা। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং মেম্বারদের হাতে এবং স্কুল শিক্ষকদের হাতে বেত তুলে দিতে হবে বেতের ব্যবহার সুনিশ্চিত করতে হবে
বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (ADR) আরও শক্তিশালী করা।
4. রাজনৈতিক ও সামাজিক সংস্কৃতি পরিবর্তন
রাজনৈতিক নেতৃত্বকে উদাহরণ হতে হবে (কোনো অপরাধীকে প্রশ্রয় না দিয়ে)।
সমাজে “সহিংসতাকে লজ্জার বিষয়” হিসেবে প্রচার করতে হবে।
5. অর্থনৈতিক সুযোগ বৃদ্ধি
কর্মসংস্থান ও সমান অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরি না হলে লোভ ও প্রতিযোগিতা থেকে অপরাধ বাড়বেই।
সহজভাবে বললে, আইনের শাসন, নৈতিকতার শিক্ষা আর অর্থনৈতিক সুযোগ—এই তিন জিনিস শক্ত না হলে বাংলাদেশে এই ধরনের অমানবিক ঘটনা কমবে না।
লায়ন আল আমিন লেখক ও কলামিস্ট।