একসময় মিরসরাই ছিল সভ্যতা, সংস্কৃতি, সাহিত্য, জ্ঞান চর্চা, নাটক, যাত্রা, বলি খেলা, সাঁড়ের লড়াই, হাডু ড্ডুু খেলা, গোল্লাছুট, যাদু-মধু, চাঁদনীরাতে পলা০পলী বা লুকা লুকি, মন্দুরুশ ইত্যাদি খেলাধুলা। আর এসব খেলাধুলার মাধ্যমে সুসম্পর্ক পরিচয়, একে অপরের সাথে ভালোবাসা, সহাদ্যপূর্ণ আচার আচরণ, একে অন্যের গাড়িতে দাত্তরাত, খই চিড়া খাওয়া, মোয়া, সেমাই, খেজুর রশের শিন্নি কত কি মধুর জীবন ও সমাজ ব্যবস্থা এবং আনন্দ বিনোদন ছিল তা ভাষায় বক্ত করে শেষ করা যাবে না।
ফুটবল: ফুটবল মিরসরাই ইতিহাসের গৌরব ও ঐতিয্যের খেলা। স্কুল জুনের ফুটবল খেলা দেখার জন্য গ্রামের মানুষ আবাল বৃদ্ধ এক কাতারে সারিবদ্ধ হয়ে বন্ধুত্যের পাহাড় গড়ে তুলতেন। ঐতিহাসিক আবুতোরার বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ফুটবল এবং যে কোন ক্রিড়া প্রতিযোগিতায় ছিলেন সেরা। তার পাশাপাশি কমর আলী, নিজামপুর, দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয়, পরবর্তীতে মলিয়াশ, জোরারগন্ধ, করেরহাট, মগাদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, মিরসরাই পাইলট স্কুল, হাদিফকিরহাট স্কুল, ঝুলনপুল বেনিমাধব উচ্চ বিদ্যালয় ফুটবলে আলো ছড়িয়েছেন। বিশেষ করে ফুটবল খেলা দেখার জন্য তখন গ্রামের খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের এক বেলা কাজ করে বিকেল বেলায় দল বেধে খেলা দেখতে যেতেন মিরসরাই স্টোডিয়ামে। গত ১৫ বছর যাবৎ ফুটবল খেলা তো হয়ই না, নাটক, বলি খেলা, যাত্রা গোল্লাছুট সেগুলিতো ৩০ বছর আগেই বাঘে খেয়েছে। বর্তমান যুবকেরা পড়ালেখা, খেলাধুলা কোনটাতেই ভালো অবদান রাখছে না। সবাই এখন রাজনীতির মাঠে, বালি-সিমেন্টর ব্যবসা, মাটি দখল, সালিশ-বাণিজ্য করে আয় রোজগারের হিসাব নিয়ে দলাদলিতে ব্যস্ত। আপনার জমি লেবার দিয়ে মাটি কেটে আপনার পুকুর ভরাট করতে পারবেন না। যুবলীগ, ছাত্রলীগের ছেলেদের বা স্থানীয় নেতাদেরকে কন্টাক দিতে হবে। অন্যথায় কাজ করতে পারবেন না। সিন্ডিগেট করে মাটি ও বালি, পাথার ইত্যাদির দাম বৃদ্ধির কাজে ব্যস্ত থাকে। সালিশ ও বালির বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকার পাহাড় গড়ে তুলছে। এখানে শিল্পজুনকে কেন্দ্র করে আবু তোরাব ফারুক, মগাদিয়ার আফসা, জাহাঙ্গীর, মামুন, নাজিমউদ্দিন অবৈধ টাকার পাহাড় গড়ে তুলছে। তারা গ্রামবাসীকে বিভিন্ন হামলা, মামলার মাধ্যমে সর্বদা আতঙ্কে রাখে। বিশেষ করে গ্রাম্য সালিশ বা পঞ্চায়েত বৈঠকে তারা উশৃঙ্খলা হয়ে উঠে। সালিশ বাণিজ্য করে তারা আওয়ামী লীগ বিএনপি ভাগ করে। যদি বিএনপি সমর্থকের গন্ধ পায় তাহলে সর্বোচ্চ সম্মান, অর্থ লুটে খায়। গ্রামবাসীকে আতঙ্কে রাখার কৌশল হিসেবে তারা বিভ্নি গ্রুপে গ্রুপে ঈদের চান্দে মারামারি- হুন্ডা মোহড়া, রোড মোহড়ার মাধ্যমে বাজার মার্কেটকে আতঙ্কিত করে তুলে।
মিরসরাইতে গরু চুরি যেন থামছেই না। গরু চুরি করে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করে হুন্ডা ক্রয় করে গুন্ডামি করে চলেছে। স্থানীয় প্রশাসন যেন চোরে চোরে খালাতো ভাই। সবতো হামারা কর্মী হে, যে ছেলেটি স্কুলের ধারে কাছেও যায়নি কলেজ তো দূরে থাক। এখন সে মেম্বার সমাজের সরদার, মাদবর। এমনও দেখেছি গত ১০ বছরে শতকোটি টাকার মালিক হতে, যেন আলাদিনের আশ্চর্য্য চ্যারাক ঘরকুনে টাকার সিন্ধুক তৈরী করে। মিরসরাই শিল্পজোনকে কেন্দ্র করে এবং জায়গা-জমি ক্রয়-বিক্রয় করে একজনের জায়গা আরেকজনের নামে বিএস রেকড করে দলীয় প্রভাব দেখিয়ে টাকা আয়ের মহোৎসব চলছে। একজনের জায়গার মালিক ১০জন। কিন্তু ওয়ারিশ সার্টিফিকেটে ৯ জনকে বাদ দিয়ে ১ জন কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়ে গেলেন। তার মধ্যে চেয়ারম্যানও ভাগ পেয়েছেন সার্টিফিকেট বিনিময়ের কারণে। মিরসরাইতে সর্বত্র এখন মাদকের আড্ডাখানা। সন্ধ্যা হলে স্কুলের মাঠের কোনায়, কিছু বিভিন্ন খালের উপর ব্রিজের গোড়ায়, বিশেষ কোন বাড়িতে, মদ, ইয়াবা বিক্রি করে। এসব ঘটনা পুলিশ প্রশসন জানে, তবু কেন প্রতিকার নেই। গ্রামবাসীর বুঝে আসে না। মগাদিয়া মুন্সিবাড়ীর ফকিরের ছেলে নবী খালগড়ায় গড়ে তুলেছেন মদের বাড়ী। প্রতিটি মেম্বার চেয়ারম্যান এ বিষয়ে জানে কোন গ্রামের কোন ছেলে মাদক দ্রব্যের সাথে জড়িত। আবু তোরাব, মিঠাছড়া, মগাদিয়া, পুলের গড়ার কথা আগেই বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়, টিভি মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়েছে। এর পরেও প্রশাসন কি ভূমিকা রাখছে তা আল্লাহ জানে। এখন তো মাদক দ্রব্য নিয়ে কথা বলাই মহা বিপদ। কারণ বিভিন্ন বাহিনীর হুমকি, ধমকি ইত্যাদিতে সমাজের ভালো প্রতিবাদী মানুষগুলি চোখ বেঁধে পথ চলে। দুখের বিষয় সন্ধার পর সন্তান কোথায় যাচ্ছে, কি করছে কোন খবর রাখেনা পিতা-মাতা। রাত হলেই গরু চুরির আতঙ্কে সমাজের মানুষ রাতভর যাগ্রিত থেকেও গরু রক্ষা করতে পারছে না। গরু চুরির জন্য গ্রুপে গ্রুপে বিভিন্ন ইউনিয়নে ছড়িয়ে পরে বেপরোয়া গরু চোর বাহিনী।