এ রহমান: ২৮শে জুন ২০২৫ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নে আধুনিক সেচ ব্যবস্থার যন্ত্রাপাতি আমদানি ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকারি বাধা দুরীকরনের জন্য শেরপা পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন শেরপা পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আবু তাহের, ডেপুটি ম্যানেজার ইঞ্জিনিয়ার রুহুল আমিন, প্রজেক্ট ইনচার্জ মাহবুবুর রহমান প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মোঃ আবু তাহের। তিনি বলেন, বাংলাদেশের কৃষিখাতে শেরপা পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান। ২০১১ সালে আমাদের দেশে সোলার পাওয়ার চালিত প্রথম সফল ডিপ টিউবওয়েলটি আমরাই স্থাপন করেছিলাম, যা ছিল পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ইসলামপুরে। দেশের কৃষির উন্নয়নে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) সংগে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছি। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা বিএডিসির সহযোগিতায় বাংলাদেশের সেচ ব্যবস্থায় অত্যাধুনিক একটি প্রযুক্তির প্রয়োগ করতে যাচ্ছি। এর জন্য বিএডিসি থেকে একটি প্রকল্পও গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু সরকারের কাস্টমস বিভাগের সংগে ভুল বোঝাবুঝির কারণে আমাদের আমদানি করা সেন্টার পিভট ইরিগেশন (সিপিআই) সিস্টেমটি বর্তমানে চট্টগ্রাম পোর্টে পড়ে আছে। ১. বাংলাদেশে প্রায় ১৫ লাখ ডিপ টিউবওয়েল ও শ্যালো টিউবওয়েল রয়েছে। ফসল উৎপাদনের জন্য এসব টিউবওয়েলের মাধ্যমে ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে বিভিন্ন ধরনের সেচ কাজে ব্যবহার করা হয়। প্রচলিত এসব ডিপ টিউবওয়েল ও শ্যালো টিউবওয়েলের মাধ্যমে যে পানি উত্তোলন করা হয় তার সঠিক ব্যবহার হয় মাত্র ৫০ শতাংশ। বাকি পানি অপচয় হয়। এই অপচয়ের কারণে বাংলাদেশের ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে এবং দেশের উত্তরাঞ্চলের কিছু এলাকা মরুভূমিতে পরিণত হওয়ার আলামত শুরু হয়েছে। ২. পানির অপচয় রোধ করার জন্য ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সেন্টার পিভট ইরিগেশন (সিপিআই) সিস্টেমে সেচ কাজ পরিচালনা করা হয়। আমাদের দেশে প্রচলিত পদ্ধিতে পাম্পের মাধ্যমে জমির মাটিতে সরাসরি পানি প্রবাহিত করা হয়। সিপিআই সিস্টেমে স্প্রে আকারে বৃষ্টির মতো করে পানি ছিটিয়ে দেওয়া হয়। যার ফলে ফসলের পাতা ও মাটি সসুসমভাবে পানি পেয়ে থাকে। এই পদ্ধতিতে পানির ব্যবহার বা কর্মদক্ষতা প্ৰায় ৮৫ থেকে ৯৮ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলকে দ্রুত মরুকরণের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বিএডিসি প্রথমবারের মতো দেশে সিপিআই সিস্টেম চালু করা উদ্যোগ নিয়েছে। ৩. বিএডিসি সিপিআই সিস্টেমের মাধ্যমে পাবনা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জের ভূ-উপরিস্থ ও ভূগর্ভস্থ পানিকে কাজে লাগানোর জন্য সেচ উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে এবং এর জন্য দরপত্র আহবান করেছে। আমাদের প্রতিষ্ঠান শেরপা পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড দরপত্রে অংশগ্রহণের মাধ্যমে কার্যাদেশ পায়। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আমরা Austria এর কাছ থেকে একটি সিপিআই সিস্টেম আমদানির সিন্ধান্ত গ্রহণ করি। এই সিস্টেমটি শুল্কায়নের জন্য বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে পড়ে আছে। ইউরোপের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান BAUER, ৪.বলা প্রয়োজন যে, সিপিআই সিস্টেমটি একটি সম্পূর্ণ সিস্টেম যার একটি যন্ত্রাংশকে যদি সিস্টেম থেকে বিযুক্ত করা হয়, তাতে সম্পূর্ণ সিস্টেমটি অকার্যকর হয়ে যাবে। যে কারণে প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান এই যন্ত্রটিকে একক সিস্টেম হিসেবে রপ্তানি করে থাকে। বিএডিসির কার্যাদেশ এবং চট্টগ্রামের কাস্টমস হাউস কমিশনারের কাছে পাঠানো চিঠিতেও সিপিআই সিস্টেমকে একক সিস্টেম হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। সিস্টেমটি রপ্তানির জন্য BAUER, Austria শেরপা পাওয়ারকে যে Proforma Invoice পাঠায়, তার EU Custom Tariff HS Code: 8424.82.10 & Bangladesh Custom Tariff HS Code: 8424.82.00 ৫. কৃষি যন্ত্রটি চট্টগ্রাম কাস্টমস-এ আশার পর গত ১৭ জুন ২০২৫ তারিখে Bangladesh Custom Tariff HS Code: 8424.82.00 অনুযায়ী শুল্কায়নের জন্য জমা দেওয়া হয়। এতে ডিউটির পরিমান হওয়ার কথা ১২ লাখ ৫ হাজার ৪৬৯ টাকা ৭১ পয়সা (১২,০৫,৪৬৯.৭১)। চট্টগ্রাম কাস্টমস-এর কর্মকর্তা জনাব এ এইচ এম মাহবুবুর রশিদ (রাজস্ব কর্মকর্তা, সেকশন-৫-এ) এবং মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম (ডেপুটি কমিশনার অব কাস্টমস (প্রিভেন্টিভ) সিপিআই সিস্টেমকে একক সিস্টেম হিসেবে গ্রহণ করতে রাজি নন। তারা সিস্টেমটির বিভিন্ন যন্ত্রাংশকে আলাদা করে, বিশেষ করে সিস্টেমটির যন্ত্রাংশ ওয়াটার ডিস্ট্রিবিউশনও টাওয়ারে ব্যবহৃত ৫ টন পাইপকে আলাদা করে শুল্কায়ন করতে আগ্রহী। এ বিষয়ে তারা আমাদের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টকে মৌখিকভাবে অবহিত করেছেন। আমাদের সিএন্ডএফ এজেন্ট ধারণা দিয়েছেন যে, এই পদ্ধতিতে শুল্কায়ন করা হলে শুল্ক ও জরিমানাসহ কমবেশি ৪২ লাখ টাকা দিতে হবে। যন্ত্রাংশকে আলাদা করে শুল্কায়ন প্রক্রিয়ার বিষয়ে আমাদের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট আপত্তি তুললে জনাব মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, আপনারা সিস্টেম না লিখে প্লান্ট লিখলে আমরা এটিকে একটি ইউনিট হিসেবে বিবেচনা করতে পারতাম। জবাবে আমি বলি, প্লান্ট শব্দটি ব্যবহার হয় শিল্পায়নের ক্ষেত্রে। আর ইরিগেশনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় সিস্টেম। কিন্তু তিনি আমাদের যুক্তিতে সন্তুষ্ট নন ৷ ৬. বিএডিসির পাবনা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জ জেলায় ভূ-উপরিস্থ ও ভূগর্ভস্থ পানির মাধ্যমে সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক জনাব এ বি এম মাহমুদ হাসান খানকে অবহিত করি। তিনি গত ২৫ জুন ২০২৫ তারিখে চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার বরাবর সিস্টেমটিকে একক কৃষি যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করে পত্র প্রদান করেছেন। এর আগে গত ২৪ জুন ২০২৫ তারিখে আমরা এ বিষয়ে অবহিত করিয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস কমিশনারের কাছে একটি চিঠি জমা দিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার দপ্তর থেকে আমরা ইতিবাচক কোনো সাড়া পাইনি। আমাদের প্রশ্ন হলো, যেহেতু কাস্টমস বিভাগের এই সিস্টেমটি সম্পর্কে ধারণাগত অস্পষ্টতা আছে, সেহেতু তারা এ বিষয়ে বিএডিসির মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ মতামত নিতে পারতেন। কিন্তু তারা সেটা না করে এককভাবে কীভাবে সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন? ৭. সিপিআই সিস্টেমটি বাংলাদেশে সর্বপ্রথম যন্ত্র হিসেবে স্থাপন করা হবে বিধায় প্রস্তুতকারী অস্টিয়ার প্রতিষ্ঠান হতে দুইজন প্রতিনিধি বাংলাদেশে আশার কথা রয়েছে। কিন্তু আমাদের সিস্টেমটি কাস্টমস বিভাগে আটকে থাকায় তাদের আসার ব্যাপারে আমরা সম্মতি জানাতে পারছি না। তাছাড়া সিস্টেমটি কাস্টমস বিভাগে আটকে থাকায় চট্টগ্রাম পোর্টের মাসুল এবং কন্টেইনারের মাসুল মিলিয়ে আমাদের বড় অংকের জরিমানা গুণতে হচ্ছে। সর্বোপরি, কাস্টমস বিভাগের অসহযোগিতা অব্যাহত থাকলে পুরো প্রকল্পটি ভেস্তে যাবার আশঙ্কা রয়েছে। এতে আমাদের প্রতিষ্ঠান সীমাহীন আর্থিক ক্ষতির সন্মুখীন হবে। একই সংগে বাংলাদেশও কৃষির ক্ষেত্রে একটি আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তি থেকে বঞ্চিত হবে। দেশের স্বার্থে প্রকৃত তথ্য মতে ও প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের ক্যাটালগ এবং আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী উক্ত সিস্টেমটিকে একটি একক সিস্টেম হিসেবে বিবেচনা করে শুল্কায়ন করার জন্য সরকার ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে অনুরোধ জানান।