1. [email protected] : editor :
  2. [email protected] : facfltd :
  3. [email protected] : FagTrEwL :
  4. [email protected] : newseditor :
কুদসী ও নববি হাদীসের পার্থক্য কোথায়?___মুফতী মাসুম বিল্লাহ নাফিয়ী - news ATV
সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫, ১২:৫১ অপরাহ্ন

কুদসী ও নববি হাদীসের পার্থক্য কোথায়?___মুফতী মাসুম বিল্লাহ নাফিয়ী

রিপোর্টার নাম
  • আপডেট সময় : মঙ্গলবার, ২২ মার্চ, ২০২২
  • ৩১৯ Time View
মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীনের যে বাণী কুরআনুল কারিমে জায়গা পায়নি, তা জায়গায় পেয়েছে হাদীস শরীফে। এ হাদিসগুলো হাদীসে কুদসী নামে পরিচিত। রাসুলুল্লাহ (দঃ) নিজ জবানে বর্ণনা করলেও তা মহান আল্লাহ তায়া’লার নামে প্রকাশিত হয়েছে।
ইসলামী শরীয়া’তের চার উৎস মূলের অন্যতম হচ্ছে, ‘আল-হাদীস’ পবিত্র আল কুরআনুল কারীমের পরেই যার স্থান। হাদীস হচ্ছে – প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মাদ মোস্তফা (দঃ)- এর মুখনিঃসৃত নিজস্ব বাণী ও কর্ম এবং রাসূল (দঃ) সাহাবায়ে কেরাম(রাঃ) গণের বক্তব্য ও কর্মের অনুমোদন। এমনকি রাসূলুল্লাহ (দঃ)-এর কথা, কাজ ও অনুমোদনের বিপরিত নয়, সাহাবায়ে কেরামের এমন সব কথা, কাজ ও অনুমোদন হাদীসের মধ্যে গণ্য। হাদীসসমূহের মধ্যে এমন কতগুলো হাদীস রয়েছে যেগুলো আল্লাহর নবী (দঃ) নিজ জবানে বর্ণনা করলেও তা মহান আল্লাহ তায়া’লার নামে প্রকাশিত হয়েছে। যেমন – ‘আল্লাহ তায়া’লা বলেছেন’ কিংবা ‘মহান আল্লাহ তায়া’লা বলেন’ এভাবে উল্লেখ হয়েছে। হাদীস শাস্ত্র বিশারদ – মুহাদ্দিসদের কাছে এগুলো ‘হাদীসে কুদসী’ নামে পরিচিত। কুদসী শব্দের অর্থ হচ্ছে – পবিত্র (দোষ-ক্রটি থেকে)। যা আল্লাহ তায়া’লার গুনবাচক নামসমূহের আসমাউল হুসনার একটি নাম। যেহেতু এ হাদীসগুলো সরাসরি আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত তাই এগুলোকে ‘হাদীসে কুদসী’ নামে নামকরণ করা হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ (দঃ) যখন এ হাদীসগুলো ব্যক্ত করতেন, তখন তা সরাসরি আল্লাহর পক্ষ থেকে বর্ণনা করতেন। যেমন – আল্লাহ তায়া’লা বলেছেন বা বলেন, আবার কখনও বা বলতেন, ‘জিবরাঈ’লকে আল্লাহ তায়া’লা বলেছেন, কিংবা ‘জিবরাঈ’ল (আঃ) আমাকে বলেছেন।
যে হাদীসের মুল বক্তব্য আল্লাহ সরাসরি রাসূল (দঃ) কে ইলহাম বা স্বপ্ন যোগে জানিয়ে দিয়েছেন, রাসূল (দঃ) নিজ ভাষায় তা বর্ণনা করেছেন তাকে হাদীসে কুদসী বলে। যে হাদিসের মূল কথা সরাসরি আল্লাহ তা’য়ালার পক্ষ থেকে প্রাপ্ত এবং নূরনবী হজরত মুহাম্মদ (দঃ) নিজের ভাষায় তা উম্মতকে জানিয়েছেন, সেই হাদিসকেই হাদীসে কুদসী বলা হয়। হাদীসে কুদসী ঐ হাদিস. যার ভাব আল্লাহ, কিন্তু ভাষা মহানবীর। হাদিসে কুদসীকে হাদীসে জিব্রাইল, হাদীসে ইলাহিত ও হাদীসে রাব্বানীও বলে। মোট কথা যেসব হাদীসের মর্ম রাসূলুল্লাহ (দঃ) আল্লাহর পক্ষ থেকে ‘ইলহাম’ কিংবা জিবরাঈ’ল (আঃ) এর মাধ্যমে জ্ঞাত হয়ে নিজ ভাষায় প্রকাশ করেছেন, তাই ‘হাদীসে কুদসী’ হিসেবে খ্যাত। তাছাড়াও প্রাথমিক যুগের মুহাদ্দিসগণের মতে – ‘হাদীসে কুদসী’র সংখ্যা একশ’য়ের কিছু বেশি। কিন্তু পরবর্তী কালের মুহাদ্দিসগণ প্রায় সহস্র হাদীসকে ‘হাদীসে কুদসী’ হিসাবে গণ্য করেছেন।
ব্যখ্যাঃ আল্লাহ তা’য়ালার যেই কথাগুলো কুরানুল কারীমের ‘আয়াত’ হিসেবে নাযিল করা হয়নি বরং, আল্লাহ তাআ’লা রাসুল(দঃ) কে স্বপ্নের মাধ্যমে অথবা তিনার অন্তরে ‘ইলহাম’ করে পাঠিয়েছেন, আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম সেই কথাগুলো আল্লাহর পক্ষ থেকে নিজ ভাষায় তিনার উম্মতকে জানিয়ে দিয়েছেন, সেইগুলোকে হাদীসে কুদসী বলা হয়। যেহেতু এই হাদীসগুলো সরাসরি আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত, তাই এগুলোকে ‘হাদীসে ক্বুদসী’ নামে নামকরণ করা হয়েছে।হাদীসে কুদসীর কথাগুলো আল্লাহর, কিন্তু তার ভাষা বা বর্ণনা করেছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে। অপরদিকে, কুরআনুল মাজিদের আয়াতগুলোর কথা এবং ভাষা সমস্তটাই স্বয়ং আল্লাহ তা’য়ালার।
হাদীসে কুদসীগুলো বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ সহ অন্যান্য হাদীসের কিতাবগুলোতে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। হাদীসে কুদসী চেনার উপায় হচ্ছে, এই হাদীসগুলোর প্রথমেই রাসুল(দঃ) “আল্লাহ তায়া’লা বলেছেন, বলে বলেন”। উল্লেখ্য, অনেকে মনে করেন হাদীসে কুদসী হিসেবে যেইগুলো বর্ণিত হয়েছে, তার সবগুলোই বুঝি সহীহ! এটা ঠিক নয়। অন্য হাদীসের মতো, হাদীসে কুদসীর সনদ বা রাবীর উপর নির্ভর করে হাদীসে কুদসীও সহীহ, হাসান, জয়ীফ অথবা জাল হতে পারে। যেমন,একটি বিখ্যাত হাদীসে কুদসী: আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আ’নহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,“আল্লাহ আযযা ওয়া-যাল কিয়ামতের দিন বলবেন, “হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ ছিলাম, তুমি আমাকে দেখতে আসনি।” মানুষ তখন বলবে, “হে আমার পালনকর্তা! আমি কিভাবে আপনাকে দেখতে যাব, আপনি হচ্ছেন সারা জাহানের পালনকর্তা?” তখন আল্লাহ বলবেন, “তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ ছিল? তুমি তাকে দেখতে যাওনি। তুমি কি জানতে না যে, তুমি যদি তাকে দেখতে যেতে, তাহলে অবশ্যই তুমি আমাকে তার কাছে পেতে?”
আল্লাহ সোবহানাহু আরো বলবেন, “হে আদম সন্তান! আমি তোমার কাছে খাবার চেয়েছিলাম, তুমি আমাকে খাবার দাওনি।” মানুষ তখন বলবে, “হে আমার পালনকর্তা! আমি কিভাবে আপনাকে খাবার দেব, আপনি তো হচ্ছেন সারা জাহানের প্রভু?” তখন আল্লাহ বলবেন, “তোমার কি জানা ছিল না যে, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাবার চেয়েছিল, কিন্তু তুমি তাকে খাবার দাওনি? তোমার কি জানা ছিল না যে, যদি তাকে খাবার দিতে, তাহলে অবশ্যই তা আমার কাছে পেতে? ”আল্লাহ আরো বলবেন,“হে আদম সন্তান! তোমার কাছে আমি পানি চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে পান করাওনি। ”বান্দা বলবে, “হে আমার পালনকর্তা! আমি কিভাবে আপনাকে পানি পান করাবো, আপনি তো হচ্ছেন সমগ্র জগতের পালনকর্তা?’ তখন আল্লাহ বলবেন, “আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে পানি চেয়েছিল, তুমি তাকে পান করাওনি। তুমি কি জানতে না যে, যদি তাকে পানি পান করাতে, তাহলে তা অবশ্যই আমাকে কাছে পেতে? ”সহীহ মুসলিমঃ ২৫৬৯; মুসনাদে আহমাদঃ ৮৯৮৯।
এছাড়াও অনেকেই জানে না কুরআনুল কারীম, হাদীসে কুদসী ও হাদীসে নববির পরিচয় বা পার্থক্য কি?। সংক্ষিপ্তভাবে এ তিনটি বিষয়ের পরিচয় তুলে ধরা হলো। যথা-১.কুরআনুল কারীম যার শব্দ ও অর্থ উভয়টিই আল্লাহ তা’য়ালার পক্ষ থেকে প্রকাশ্য ওহির মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসেছে সেসমস্ত বক্তব্য(বাণী) কুরআনুল কারীম।২. হাদীসে কুদসী যে হাদীসের মূল ভাব বা অর্থ আল্লাহ তা’য়ালার পক্ষ থেকে এসেছে এবং ভাষা বা শব্দ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট থেকে অপ্রকাশ্য ওহির মাধ্যমে(এলহাম) হয়েছে তা হাদিসে কুদসী । উল্লেখ্য হাদীসে কুদসীর ক্ষেত্রেও কুরআনুল কারীমের ন্যায় ‘ক্বালাল্লাহু তাআলা’ বলে শুরু করা হয় অর্থাৎ আল্লাহ তা’য়ালা বলেন।৩. হাদীসে নববি যে হাদীসের শব্দ ও অর্থ উভয়ই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এবং তা অপ্রকাশ্য ওহির মাধ্যমে যা হাদীসে নববি।
মুহাদ্দিসীনে কেরামগণের মধ্য হতে অনেকেই বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দু’রকম নূর বা আলো ছিল একটি হলো-সদা সর্বক্ষণ ও অবিচ্ছিন্ন। ঐ নূরের অবস্থা থেকে যে বক্তব্য(বাণী) বের হতো, তাকে হাদীসে নববি। দ্বিতীয়টি হলো-আকস্মিক। এটা আবার দু`ধরনের-১. যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আকস্মিক আলোর সময় তিনার স্বাধীনতা বিলুপ্ত হয়ে যে, বক্তব্য (বাণী) বের হয়েছে সে বক্তব্যকে ‌কুরআনুল মাজিদ বলা হয়।২. স্বাধীনতা বিদ্যমান থাকা অবস্থায় যে, বক্তব্য বা বাণী (এলহাম) হতো তা হাদিসে কুদসী। আল্লাহ তা’য়ালা মুসলিম উম্মাহকে কুরআন, হাদীসে কুদসি ও হাদীসে নববির ওপর আস্থা, বিশ্বাস ও যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন-আমীন।
লেখক: প্রধান সমন্বয়ক, বাংলাদেশ সোস্যাল অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 LiveTV
Theme Customized By LiveTV